গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা নেই এমন খুব কম সংখ্যক মানুষই খোঁজে পাওয়া যাবে। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার পেছনে রয়েছে নানাবিধ কারণ। খাওয়া-দাওয়ায় অনিয়ম, স্বাস্থ্যকর খাবার না খাওয়া, শারীরিক পরিশ্রম না করা, পানি কম খাওয়া ইত্যাদি নানা কারণে সৃষ্টি হয় গ্যাষ্ট্রিক বা এসিডিটি। গ্যাস্ট্রিকের এই সমস্যা শুরুর দিকে তেমন সমস্যা না হলেও পরবর্তীতে আলসার কিংবা এ জাতীয় নানাবিধ সমস্যার সম্মুখ্খীন হতে হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সচরাচর আমরা ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খেয়ে থাকি। অনেকেই আবার দীর্ঘদিন যাবৎ বুঝে না বুঝে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবন করে যাচ্ছেন। কিন্তু আমরা একবারও চিন্তা করি না গ্যাসের উৎপত্তি কোথায় থেকে এবং কীভাবে এর থেকে মূক্ত থাকা যায়।

গ্যাস্ট্রিক থেকে ওষুধ ছাড়াও প্রাকৃতিক কিছু নিয়ম অবলম্বন করলে বেচেঁ থাকা যায়। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্ত থাকতে নিচে কিছু প্রাকৃতিক উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হল। 

১. লেবু-পানিঃ-

পানি শরীরে জন্য যে কতটা উপকারী তা আমরা কম বেশী সবাই জানি। হালকা গরম পানির সঙ্গে লেবুর রস যুক্ত করলে তা প্রাকৃতিক মলবর্ধক হিসেবে কাজ করে। এটি পাকস্থলি পরিষ্কার রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

২. ধীরে ধীরে খানঃ-

খুব তাড়াতাড়ি খাবার গ্রহণের অভ্যাস থাকলে তা পরিহার করুন।তাড়াতাড়ি খাবার খাওয়ার ফলে খাবারের পাশাপাশি  বাতাস ভিতরে চলে যায।যার ফলে গ্যাসজনিত সমস্যা হতে পারে। তাছাড়া দ্রুত খাবার গ্রহন করতে গেলে খাবার সঠিকভাবে চিবানো হয়না।এতে খাবার সঠিকভাবে হজম হয় না এবং বদহজমের সৃষ্টি হয়।যার ফলে বদহজমের কারণে গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয়।

৩. মল ও বায়ূঃ-

মল ও বায়ূ ধরে রাখার প্রবনতা অনেকের মধ্যেই দেখা যায়। আপনার যখনই এসবের চাপ দেখা দিবে দীর্ঘক্ষন আটকে রাখবেন না। এতে শরীরে নানাবিধ ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। আপনি হয়ত খেয়াল করে থাকবেন মল ত্যাগের পর পেটের ফোলা ভাবটা চলে যায়। তাই মল ও বায়ুর চাপ দেখা দিলে যতদ্রুত সম্ভব তা ত্যাগ করুন।

৪. দইঃ

গ্যাস্ট্রিকের থেকে মুক্তি পেতে দই অত্যান্ত  কার্যকরি একটি উপাদান। দইয়ের ল্যাকটোব্যাকিলাস, অ্যাসিডোফিলাস ও বিফিডাসের মতো নানা উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে ,যা খেলে হজম ভালো হয়, গ্যাস কমে। খাবারের পর  নিয়মিত টকদই  খেলে গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

৫. মৌরিঃ

পেটের সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে মেীরি কার্যকরি ভূমিকা  পালন করে।  মেীরিতে রয়েছে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক, ম্যাংগানিজ, ভিটামিন সি, আয়রন, সেলেনিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামের মতো খনিজ উপাদান । পেটে আটকে  থাকা গ্যাসের জন্য মৌরি একটি প্রাকৃতিক সমাধান।

মেীরির বীজ তাৎক্ষণিকভাবে এসিডিটি কমিয়ে স্বস্তি এনে দিতে পারে। খাবার খাওয়ার পর মেীরির বীজ চিবিয়ে খেলে নানা উপকার পাওয়া যায়। বদহজম এবং পেট ফাঁপা সমস্যা সমাধানে এটি বেশ কার্যকর। অল্প পানিতে কয়েকটি মৌরি বীজ নিয়ে সেদ্ধ করে পানি পান করলে পাকস্থলির জন্য বিশেষ উপকারী এবং গ্যাস্ট্রিক এনজাইম তৈরিতে মৌরি অত্যান্ত  কার্যকর ভূমিকা রাখে।

তবে, গর্ভবতী বা বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েরা এটি খাওয়া থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়।

৬. ঠাণ্ডা দুধঃ-

পাকস্থলি থেকে তৈরী এসিড স্থিতিশীল রাখতে এক গ্লাস ঠান্ডা দুধই যথেষ্ট। দুধে থাকা ক্যালসিয়াম পাকস্থলিতে এসিড তৈরীর প্রক্রিয়াকে স্থিতিশীল রাখে এতে গ্যাসের সমস্যা মুক্তি পাওয়া যায়।

৭.  পানীয় চয়নঃ-

পার্টি কিংবা ভালো মন্দ খাবার পরে কার না মন চায় একটু পানীয় পান করতে।কিন্তু এই পানীয় আপনার গ্যাসের কারণ হতে পারে। অতিরিক্ত কার্বনেট ও সোডাযুক্ত পানীয় পাকস্থলীতে প্রচুর গ্যাস উৎপন্ন করে। তাই পানীয় নির্বাচন করার ক্ষেত্রে সতর্ক হোন।

৮.  তুলসি পাতাঃ


তুলসি পাতা পাকস্থলিতে উৎপন্ন গ্যাস্ট্রিক এসিডের কার্যকারিতা কমাতে সহায়ক। তুলসি পাতায়  রয়েছে শীতলীকরন এবং বায়ুনাশক উপাদান যা  এসিডের কার্যকারিতা কমাতে সহায়তা করে। গ্যাসের সমস্যা দেখা দিলে ৫-৬টি তুলসি পাতা চিবিয়ে খেয়ে ফেলুন  অথবা ৩-৪টি তুলসি পাতা সেদ্ধ করে পানিটুকু মধু দিয়ে পান করুন এতে আপনার গ্যাসের সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে।

আরো পড়ুনঃ- পানি স্বাস্থ্যের জন্য কতটা জরুরী?

৯.  এলাচঃ


এলাচ পাকস্থলিতে অতিরিক্ত এসিড নিঃসরণের কুপ্রভাব দূর করে। কয়েকটি এলাচ গুড়ো করে পানিতে সেদ্ধ করে পানিটুক পান করে নিন। এটি  হজম ক্ষমতা বাড়াতে এবং পাকস্থলির খিঁচুনি দূর করতে সহায়তা করে।

১০দারুচিনিঃ

হজমের জন্য খুবই উপকারি দারুচিনি। এক গ্লাস পানিতে আধাঁ চামচ দারুচিনির গুঁড়ো নিয়ে  ফুটিয়ে নিন। দিনে  ২ থেকে ৩ বার  দারুচিনির গুড়া মিশ্র্রিত পানি পান করুন।পেটের গ্যাসের সমস্যা দূরে থাকবে।

১১. ডাবের পানিঃ

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সমাধান করতে পারে ডাবের পানি।ডাবের পানিপাকস্থলিতে শ্লেষ্মা উৎপাদনে সহায়তা করে। এর ফলে  পাকস্থলিতে  সৃষ্ট অতিরিক্ত গ্যাসের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।  

১২. তাপ প্রয়োগ করুনঃ-

যখন গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা হয় তখন পেটের উপর গরম পানির বোতল বা হিটিং প্যাড রাখুন। উষ্ণতা অন্ত্রের পেশী শিথিল করে, গ্যাসকে অন্ত্রের মধ্য দিয়ে যেতে সাহায্য করে।

১৩. আপেল সিডার ভিনেগারঃ-

অ্যাপল সিডার ভিনেগার পাকস্থলীর অ্যাসিড এবং হজম এনজাইমগুলির উৎপাদনে সহায়তা করে। এটি গ্যাসের ব্যথা দ্রুত হ্রাস করতেও সহায়তা করতে পারে।

এক গ্লাস পানিতে এক টেবিল চামচ ভিনেগার যোগ করুন এবং গ্যাসের ব্যথা এবং ফোলাভাব রোধ করতে খাবারের আগে এটি পান করুন। ভিনেগার মিশ্রিত পান করার পর পরিষ্কার পানি দিয়ে  কুলকুচি করে নিন।  কারণ ভিনেগার দাঁতের এনামেলের  ক্ষতি করতে পারে।

১৪. প্রোবায়োটিক গ্রহণ করুনঃ-

প্রোবায়োটিক অন্ত্রের গ্যাস, পেটে ব্যথা থেকে মুক্তি দিতে পারে। এটি আপনার শরীরকে ভারসাম্য বজায় রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।

১৫. অনুশীলনঃ-

হালকা ব্যায়াম অন্ত্রের পেশীগুলি শিথিল করে পাচনতন্ত্রের মাধ্যমে গ্যাস সরাতে সহায়তা করে। খাবার  গ্রহণের পরে  একটু হাঁটা-চলা করতে পারেন। মনে রাখবেন খাবার খাওয়ার পর পরই শুতে যাবেন না।এতে আপনার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

আরো পড়ুনঃ জেনে নিন ধূমপান থেকে বিরত থাকার কিছু কার্যকরি উপায়।

Leave A Comment