ইংরেজি: Monday, ১১ November ২০২৪ | বাংলা: ১১ ফাল্গুন ১৪৩১

ভারতে সাত দফায় শুরু হওয়া ছয় সপ্তাহের লোকসভা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ছবি এখন কোথায় নেই! গরিব মানুষের হাতে তুলে দেওয়া চালের বস্তা থেকে শুরু করে শহর-গ্রামে বিশাল আকারের পোস্টার—সবখানেই তাঁর ছবি।

সংসদ নির্বাচনে একচেটিয়া জয় পেতে উদ্‌গ্রীব মোদির ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। সে লক্ষ্যে দলটি তাঁর জনপ্রিয়তার ওপর ভর করছে। ভোটারদের কাছে দলটির বার্তা—দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এনেছেন মোদি, উন্নত করেছেন অবকাঠামো, ভারতের অবস্থানও বিশ্বে করেছেন উন্নত।

ভারতের সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে ৪০০টিতে জয় পাওয়ার লক্ষ্য কট্টর হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপি ও এর মিত্র দলগুলোর। ২০১৯ সালের সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনে ৩৫২টিতে জিতেছিল তারা।

এবারের নির্বাচনে আগের চেয়ে বেশি আসনে জিততে মোদির জনপ্রিয়তা কাজে লাগানোর বাইরেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ আসনে স্থানীয় পর্যায়ের কৌশল খাটাচ্ছে বিজেপি ও মিত্ররা। তাদের আশা, এ কৌশলে বিরোধীদের কাছ থেকে আসনগুলো ছিনিয়ে নিতে পারবে তারা।

আগামী ১ জুন শেষ হবে লোকসভার সব ধাপের ভোট গ্রহণ। জনমত জরিপ বলছে, নরেন্দ্র মোদি আবারও; অর্থাৎ টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসবেন। তবে ভারতের ইতিহাসে মাত্র একবার ৪০০ আসনের মাইলফলক পেরোনোর ঘটনা ঘটেছে। সেই রেকর্ড মধ্য বাম কংগ্রেস পার্টির ঝুলিতে। ১৯৮৪ সালে দলের নেতা ইন্দিরা গান্ধী নিহত হওয়ার পর ওই বিশাল জয় পায় দলটি।

এবার বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোট ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) কীভাবে সেই রেকর্ড ছুঁতে এবং এই লক্ষ্যে তার সামনে থাকা বাধাগুলো কাটাতে পারে, সেই বিষয় উদ্‌ঘাটনের চেষ্টা করেছে রয়টার্স। এর অংশ হিসেবে এনডিএর কয়েকজন কর্মকর্তা, বিরোধী দলের কিছু নেতা, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ভোটারদের সঙ্গে বার্তা সংস্থাটি কথা বলেছে।

মতামতে বিজেপির তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলের কথা উঠে এসেছে। এক. বিরোধীদলীয় প্রবীণ আইনপ্রণেতাদের হারাতে তারকা প্রার্থী দাঁড় করানো; দুই. খ্রিষ্টানদের মতো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে দক্ষিণ ভারতে বিরোধীদের ঘাঁটিগুলোকে নিশানা বানানো এবং তিন. পুনর্নির্ধারণ করা রাজনৈতিক সীমানার সর্বোচ্চ ব্যবহার, যাতে উত্তর ভারতে বিরোধী দল নিয়ন্ত্রিত কিছু আসনে বিজেপির ভোটারদের অবস্থান মজবুত করা যায়।

দলের নির্বাচনী কৌশল তদারকির দায়িত্বে থাকা বিজেপির সভাপতি জে পি নাড্ডা গত এপ্রিলে রয়টার্সকে বলেন, ‘একগুচ্ছ কৌশল, সাংগঠনিক প্রতিশ্রুতি ও কৌশলের নমনীয়তা—আগে কখনো না পাওয়া আসনে বিজেপিকে এবার জিততে সহায়তা করবে।’

কিছু সমালোচক সতর্ক করে বলেন, তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসতে আগের চেয়ে বেশি উগ্রপন্থী অ্যাজেন্ডা সামনে এনে নিজের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ব্যবহার করতে পারে বিজেপি। নিজ নির্বাচনী ইশতেহারে ব্যাপকভাবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর জোর দিলেও দলটি বিয়ে এবং উত্তরাধিকারের মতো বিষয়গুলোতে ধর্মীয় ও জাতিগোষ্ঠীর মানুষের জন্য পৃথক আইনি বিধান বাতিলের অঙ্গীকার করেছে।  

অনেক মুসলিম ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষ বিজেপির এ পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছেন। পরিকল্পনাটি কার্যকর করতে সংসদে কমপক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ আইনপ্রণেতার সমর্থন লাগবে।

কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে রয়টার্সকে বলেছেন, ‘মোদি ভূমিধস জয় শুধু এ জন্যই চান, যেন সংসদে কোনো নীতিগত বিষয়ে বিতর্ক ও মতামত নাকচ করে দেওয়া যায়।’

আজ মঙ্গলবার শেষ হলো লোকসভার তৃতীয় দফার ভোট গ্রহণ। এ কয় দফায় ভোটারদের কম উপস্থিতিতে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে জয়ী হওয়ার ব্যাপারে বিজেপির নির্বাচনী কর্মকর্তাদের দৃশ্যত কম আত্মবিশ্বাসী দেখা গেছে। তবে দলটি এখনো পরবর্তী সরকার গঠন করার বিষয়ে আশাবাদী।

বিজেপি সভাপতি নাড্ডা স্বীকার করেছেন, নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সংসদে জিততে তাঁদের দক্ষিণের পাঁচটি রাজ্যে ভালো ফলাফল করতে হবে। রাজ্যগুলোতে ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশের বসবাস। কিন্তু এসব রাজ্যের মানুষ ঐতিহাসিকভাবেই বিজেপিকে ভোট দেন না।

২০১৯ সালের নির্বাচনে অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক, কেরালা, তামিলনাড়ু ও তেলেঙ্গানায় ১৩০টি আসনের মধ্যে মাত্র ৩১টিতে জয় পেয়েছিল এনডিএ। রাজ্যগুলো ভাষাগত বৈচিত্র্যে ভরা। আবার মুসলিম ও খ্রিষ্টান ভোটারদের যথেষ্ট প্রাধান্য রয়েছে এসব রাজ্যে।

কেরালা বিজেপির সংখ্যালঘু শাখার সাধারণ সম্পাদক জিজি জোসেফ বলেন, বিজেপি এ রাজ্যের ১৮ শতাংশ সংখ্যালঘু খ্রিষ্টান ভোটারের দিকে বিশেষভাবে মনোযোগ দিয়েছে। গত সাধারণ নির্বাচনে এখানকার একটি আসনেও জিততে পারেনি দলটি।

জিজি জোসেফ আরও বলেন, ‘বিজেপি গির্জাগুলোর সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যোগাযোগ করছে। যাজকদের সঙ্গে আমরা সরাসরি আলাপ-আলোচনা শুরু করেছি।’ বিজেপিতে এখন ১১ হাজার সক্রিয় খ্রিষ্টান সদস্য রয়েছেন বলে জানান তিনি। বলেন, ‘এখানে একটা পরিবর্তন এসেছে। খ্রিষ্টানরা এখন বিশ্বাস করেন, বিজেপি তাঁদের পাশে রয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী মোদির একজন রাজনৈতিক সহকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দক্ষিণে প্রায় অর্ধশত আসন পাওয়ার আশা করছেন তাঁরা।