Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the wordpress-seo domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/desh/public_html/wp-includes/functions.php on line 6114
‘অ্যানাদার লাভ’: বিক্ষোভকারীরা এ গানটি কেন গাইছে - Amader Desh
ইংরেজি: Wednesday, ১৯ February ২০২৫ | বাংলা: ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ব্রিটিশ সংগীতশিল্পী টম ওডেলের নাম আপনি নাও শুনতে পারেন। কিন্তু এক যুগ আগে মুক্তি পাওয়া তাঁর একটি গান আপনার সামাজিক মাধ্যমের ফিডে অবশ্যই ভেসে উঠেছে। গানটি হলো ২০১২ সালের ওডেলের এক্সটেনডেড প্লে বা ইপি ‘সংস ফ্রম অ্যানাদার লাভ’। সে সময় বিশ্ববাজারে কোনো ছাপই ফেলতে পারেনি গানটি। ঠিক এক দশক পর একেবারেই পাল্টে যায় চিত্র।

১৭ জুন, ২০২২। এমা নামের এক টিকটক ব্যবহারকারী যার অ্যাকাউন্ট ওডেলকে সমর্পিত, একটি ভিডিও পোস্ট করেন। ভিডিওটি ছিল ওডেলের ইউরোপীয় ট্যুরের, যেখানে তিনি মঞ্চে পিয়ানো বাজাচ্ছেন আর দর্শকেরা সমস্বরে গাইছেন ‘অ্যানাদার লাভ’-এর এই পঙ্‌ক্তিগুলো—

এবং কেউ যদি তোমাকে আঘাত দেয়, আমি লড়তে চাই
কিন্তু আমার হাত ভেঙে দেওয়া হয়েছে বার বার
তাই আমি কণ্ঠ চালাব, দেখাব ধৃষ্টতা
শব্দেরা, সব সময় তারা জেতে, কিন্তু জানি আমি হারব
এবং আমি গান গাইব যা শুধু আমাদের
কিন্তু আমি গাইব আরেকটি হৃদয়ের প্রতি
এবং আমি কাঁদতে চাই, শিখতে চাই ভালোবাসতে
কিন্তু আমার সমস্ত অশ্রু খরচ হয়ে গেছে
আরেকটি ভালোবাসায়, আরেকটি ভালোবাসায়
কিন্তু আমার সমস্ত অশ্রু খরচ হয়ে গেছে
আরেকটি ভালোবাসায়, আরেকটি ভালোবাসায়

এমার এই ভিডিওটি টিকটকে ব্যাপক ভাইরাল হয়। আর তাতেই আগস্টের মধ্যেই গান শোনার সাইট স্পটিফাইয়ে ১ বিলিয়ন স্ট্রিমের মাইলফলক অর্জন করে ‘অ্যানাদার লাভ’। কয়েক মাস পরই বছর শেষের সংগীত তালিকায় অস্ট্রিয়া, নেদারল্যান্ডস ও সুইজারল্যান্ডে শীর্ষ দশে উঠে আসে গানটি। ইউটিউবে ৯৪ কোটি বারের বেশি দেখা হয়েছে এই গানের মিউজিক ভিডিও। কিন্তু এই গানের হঠাৎ এত জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পেছনের কারণ কী?

২০২২ সাল। হিজাব নীতি ভঙ্গ করার অপরাধে ইরানি নীতি পুলিশের নির্যাতনে কুর্দি তরুণী মাসা আমিনির মৃত্যুর পর ইরানজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে বিক্ষোভ। ইরানে নারী স্বাধীনতার সমর্থনে টিকটকে চুল কেটে ভিডিও পোস্ট করতে শুরু করেন নারীরা। ভাইরাল এই ট্রেন্ডের প্রতিটি ভিডিওর পেছনে বাজতে শোনা যায় একটাই গান-‘অ্যানাদার লাভ’।

‘এবং কেউ যদি তোমাকে আঘাত দেয়, আমি লড়তে চাই’-এটা আর প্রেমাস্পদের জন্য করুণ আর্তি নয়, হয়ে ওঠে অন্যায়ের বিরুদ্ধে হুংকার। বিশ্বজুড়ে অসংখ্য নারী ইরানের নারী আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানাতে থাকেন এই গানের মাধ্যমে। ২০২২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বরে জার্মানিতে একটি শোয়ে ‘অ্যানাদার লাভ’ গানটি ‘ইরানে বিক্ষোভরত সাহসী মানুষদের’ উৎসর্গ করেন ওডেল। বলেন, ‘আমরা হয়তো ইরান থেকে অনেক দূরে জার্মানির হ্যানোভারে রয়েছি, কিন্তু আমি মনে করি আমি এই কক্ষের উপস্থিত সবার পক্ষে এ কথা বলতে পারি যে মানবাধিকার ও নারী অধিকারের জন্য আন্দোলনরত সবার পাশে আমরা আছি।’

কেবল ইরানের নারী আন্দোলন নয়, ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধেও প্রতিবাদের ভাষা হয়ে উঠেছে ‘অ্যানাদার লাভ’। টিকটক, ফেসবুক, এক্স, ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোতে ইউক্রেন যুদ্ধের নানা ক্লিপের মন্তাজের নেপথ্যে বাজছে ‘এবং কেউ যদি তোমাকে আঘাত দেয়, আমি লড়তে চাই’। ইউক্রেনীয় তো বটেই বিভিন্ন দেশের মানুষ যুদ্ধবিরোধী অবস্থানের নজির হিসেবে এ গান গেয়ে টিকটকে ভিডিও পোস্ট করছেন। কিন্তু এই নিরীহ প্রেমের গানটি কী করে জেন জিদের প্রতিবাদ সংগীত হয়ে উঠল?

১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত যাদের জন্ম, তারাই ‘জেন-জি’। জেন-জিদের বয়স এখন ১২ থেকে ২৭ বছরের মধ্যে। স্মার্ট ফোন পকেটে নিয়ে বড় হওয়া এই প্রজন্মের যোগাযোগ ও অভিব্যক্তি প্রকাশের ভাষা একটু অন্য রকমই। কাজেই তাদের প্রতিবাদের ধরনও ভিন্ন হওয়ারই কথা।

সংগীত সব সময়ই যুদ্ধ, সংঘাত ও সংকটে আশা ও সংহতির প্রতীক হয়ে ওঠে। কিন্তু সামাজিক মাধ্যমের দৌরাত্ম্যের এই সময়ে সংগীত কী ভূমিকা রাখছে? জনপ্রিয় সংগীত নিয়ে কাজ করা সাংবাদিক ও লেখক ব্র্যাড শ্রিবার ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফকে বলেন, সামাজিক মাধ্যমের কারণে জনপ্রিয় সংগীতশিল্পীদের হাতে এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সামাজিক-রাজনৈতিক ক্ষমতা রয়েছে। তিনি বলেন, তাঁরা এখন বিভিন্ন বিষয়ে, যেমন ইউক্রেনে যা ঘটছে, তা নিয়ে মানুষকে সচেতন করতে পারে। এবং এমন সব শিল্পীরা সাধারণভাবে যাদের কোনো রাজনৈতিক চেতনা থাকার কথা নয়।

শ্রিবার মূলত বলতে চাইছেন একটা সময় ছিল যখন নির্দিষ্ট কিছু শিল্পীর কাছ থেকেই রাজনৈতিক চেতনাসমৃদ্ধ সংগীত আশা করা হতো। যেমন মার্কিন শিল্পী বব ডিলান কিংবা নিনা সিমোন, ব্রিটিশ শিল্পী স্টিং কিংবা আইরিশ রক ব্র্যান্ড ইউটু, বাংলাদেশের আজম খান বা ফকির আলমগীরের কথাই ধরা যাক। কখনো গানের কথায় রাজপথে আগুন ঝরিয়েছেন, কখনো বৈষম্য ও বিভেদের যাতনার শীতল স্রোত বইয়েছেন মেরুদণ্ড দিয়ে। ক্ষমতাসীনের সরাসরি বিরুদ্ধাচরণ কিংবা বিপক্ষে যাওয়ার দায়ে অনেক গান নিষিদ্ধও হয়েছে। সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করেই তাঁরা গান গেয়েছেন, শ্রোতাদের কাছে পৌঁছেছেন এবং যাঁরা তাঁদের অবস্থানের সঙ্গে সাযুজ্য বোধ করেছেন, তাঁদের কণ্ঠ হয়ে উঠেছেন।

তবে এখন পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। স্মার্টফোন হাতে প্রতিটি মানুষের কাছে অভিব্যক্তি প্রকাশের জন্য টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্ম রয়েছে, সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার মতো হাতিয়ার রয়েছে। প্রতিবাদের ভাষা তাই হতে হবে সহজ ও অনুভূতিপ্রবণ, যা দ্রুত সর্বজনীন হয়ে উঠতে পারে। রাজনীতির জটিল মারপ্যাঁচ ছাপিয়ে তাই টম ওডেলের প্রেমের গান হয়ে ওঠে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার অস্তিত্বের জানান দেওয়ার সংগীত।