Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the dipi-divi-pixel domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/desh/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121

Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the wordpress-seo domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/desh/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121

Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the limit-login-attempts-reloaded domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/desh/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
গণতন্ত্রের ঘাটতি বাংলাদেশের নানা ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করছে - Amader Desh
ইংরেজি: Thursday, ১ May ২০২৫ | বাংলা: ০১ ভাদ্র ১৪৩২
নব্বই দশকের সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংগঠনগুলোর ক্ষমতার ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে। গণতন্ত্রের ঘাটতির ফলে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়েছে। আর এর অনিবার্য ফল হিসেবে ব্যাংকিং খাত, শেয়ারবাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও প্রকল্প বাস্তবায়নে সংকট তৈরি হয়েছে।

আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে অনুষ্ঠিত উন্নয়ন অধ্যয়ন সম্মেলনের এক কর্ম অধিবেশনে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্যে এই পর্যবেক্ষণ উঠে আসে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ ও দৈনিক বণিক বার্তা যৌথভাবে ‘প্রথম উন্নয়ন অধ্যয়নবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

দুই দিনের সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন আজ ‘গণতান্ত্রিক ঘাটতি উত্তরণের পথ’ শীর্ষক কর্ম অধিবেশন সঞ্চালনা করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির বিআইজিডির জ্যেষ্ঠ ফেলো গবেষক মির্জা হাসান, যুক্তরাজ্যের লন্ডন ইউনিভার্সিটির স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজের (সোয়াস) উন্নয়ন অধ্যয়নের অধ্যাপক নাওমি হাসান ও অস্ট্রেলিয়ার ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটির উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জুলফান তাজুদ্দিন তিনটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের যে গুরুতর ঘাটতি, সেটি সরকারের দায়িত্ব পালনে ঘাটতি তৈরি করছে কি না, সেই প্রশ্ন এসে যায়। আপনি যখন প্রবৃদ্ধি নিয়ে কথা বলবেন, এই প্রশ্ন চলেই আসে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন কোথায় দাঁড়িয়ে আছে? আয়ের চিত্র কেমন, দারিদ্র্যের পরিস্থিতিটা কী? অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ, উন্নয়ন বিশ্লেষণ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষণকে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে কি না।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব বা কর্তৃত্ব যেমন বাস্তবতা, তেমনি নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বহুমতের উপস্থিতি আছে বলে মনে করেন হোসেন জিল্লুর রহমান। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল (ক্ষমতাসীন দল) অর্থবহ নির্বাচনে ভীত ছিল। প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল নিজেদের উন্নয়নে অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী হলেও দলটির অর্থবহ নির্বাচন নিয়ে কোনো আগ্রহ ছিল না।

দেশে গণতন্ত্রের ঘাটতি সরকারের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রেও সমস্যা তৈরি করেছে বলে মনে করেন হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, ব্যাংক, শেয়ারবাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও প্রকল্প বাস্তবায়নে এই সমস্যা ব্যাপকতর হয়েছে, যা অবাক করার মতো। এসব কিছুই হচ্ছে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার অনিবার্য ফল।

বাংলাদেশে এখন জবাবদিহি ও ক্ষমতার ভারসাম্য এবং নীতি নির্ধারণীতে সক্ষমতা বাড়ানো দরকার বলে মনে করেন যুক্তরাজ্যের লন্ডন ইউনিভার্সিটির স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজের (সোয়াস) অর্থনীতির অধ্যাপক মুশতাক খান। প্যানেল আলোচকের বক্তব্যে তিনি বলেন, নব্বইয়ের দশকের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা করলে দুটি পরিবর্তন চোখে পড়ে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংগঠনগুলোর পরিবর্তন ঘটেছে। নব্বইয়ের দশকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতৃত্বে দুটি জোট ছিল। দুই জোট বিপুলসংখ্যক মানুষ জমায়েত করতে সক্ষম ছিল। আদর্শগত তেমন অমিল তাদের ছিল না। দুই জোটই একে অন্যকে প্রতিহত করতে পারত। তাদের কেউই বিশ্বাস করত না যে কোনো একটি পক্ষ চিরকাল ক্ষমতায় থাকবে। রাজনৈতিক দৃশ্যপট থেকে এক পক্ষ অন্য পক্ষকে পুরোপরি সরিয়ে দিতে পারবে না এমন একটা উপলব্ধি তাদের ছিল। ফলে রাজনীতিতে একধরনের ভারসাম্য ছিল। অর্থনীতিতে ভারসাম্য ছিল। তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকেরা ততটা রাজনৈতিকভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন না, সংসদে ছিলেন না। কাজেই বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক শাসনের ওই পর্বে নানা পক্ষের মাঝে ক্ষমতার বণ্টনের একটা ভারসাম্য ছিল। কিন্তু পরে একটি দল ক্ষমতায় এসে অন্য দলকে দৃশ্যপট থেকে সরিয়ে দিয়েছে।

অধ্যাপক মুশতাক খান বলেন, ভারতের গণতন্ত্র এখন একনায়কতন্ত্রে রূপ নিয়েছে। সে দেশের দুটি বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী আদানি ও আম্বানি এখন ভারতের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। একই ঘটনা বাংলাদেশেও ঘটছে। বড় কয়েকটি ব্যবসায়ী গ্রুপ এখানে নিয়ন্ত্রণ করছে। বাংলাদেশে এই ধারা নতুন। গত দুই দশকে নতুন কোনো শিল্প গড়ে ওঠেনি। ব্যাপক বৃহদায়তন অবকাঠামো তৈরি হয়েছে। এটা বাংলাদেশের ঋণের বোঝা বাড়াতে পারে। এরই মধ্যে যার ইঙ্গিত বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পরিলক্ষিত হচ্ছে।

মুশতাক খান বলেন, বাংলাদেশে দলের ভেতরে ক্ষমতার বণ্টন হচ্ছে। যার মানে হচ্ছে দলের সাংগঠনিক কাঠামো যথেষ্ট শক্তিশালী নয়। এমন এক পরিস্থিতিতে দেশের নাগরিক সমাজের ভূমিকা কী হবে, সে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, পরিস্থিতির উত্তরণের বিকল্প সংগঠন গড়ে তুলতে হবে, যা সরকারকে তাদের নিয়মতান্ত্রিক দায়িত্ব পালনে চাপ দিতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, শুধু ভোট বা রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় নয়, যেসব মূল সিদ্ধান্ত তাদের জীবনে গুণগত পরিবর্তন আনে, সেখানে জনগণের যুক্ততা থাকা অনিবার্য। সরকারি দলে এখন যাঁরা একে অন্যের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তাঁরা কিন্তু জনগণের প্রতিনিধি নন। তাঁরা ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা লোকজনের প্রতিনিধি। একই সমাজের প্রতিনিধি। একদলীয় শাসনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে কি লি মডেল (সিঙ্গাপুরের সাবেক প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান) বা মার্কোস (ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস) মডেলের জন্ম দিতে পারে? তার মানে একধরনের অনিশ্চয়তা এখানে রয়েছে। প্রশ্নটা এখানেই। ভবিষ্যৎ কী হতে পারে, সেটা কারও জানা নেই।

অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, গণতন্ত্রের ঘাটতি থাকার পরও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক সূচকের অগ্রগতিকে প্যারাডক্স (বৈসাদৃশ্যপূর্ণ) হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু মনে রাখা উচিত, বাংলাদেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে চারটি উপাদান মূল ভূমিকা রেখেছিল। এগুলো হচ্ছে অভিবাসী কর্মীদের প্রবাসী আয়, তৈরি পোশাকশিল্পের অগ্রযাত্রা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ ও কৃষিতে অভূতপূর্ব সাফল্য। কিন্তু যাঁদের কারণে দেশ এগিয়েছে, দেশের সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাঁদের কণ্ঠ কতটা প্রতিফলিত হয়েছে?