Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the wordpress-seo domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/desh/public_html/wp-includes/functions.php on line 6114
এই বৃষ্টি অনেকটা অস্বাভাবিক: আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ - Amader Desh
ইংরেজি: Wednesday, ১৯ February ২০২৫ | বাংলা: ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

টানা তাপপ্রবাহে অসহনীয় হয়ে উঠেছিল জনজীবন। তবে কয়েক দিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির সঙ্গে পড়ছে প্রচুর শিল। খুব অল্প সময়ের বৃষ্টিতেও বজ্রপাত হচ্ছে। সাধারণ সময়ের তুলনায় এবারের বৃষ্টিতে বজ্রপাত ও শিল পড়ার হার বেশি। এসব বিষয় নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাইফুল সামিন।

টানা তাপপ্রবাহের পর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এই বৃষ্টি কি স্বাভাবিক? ঠিক সময়ে কি বৃষ্টি এসেছে?

বজলুর রশিদ: যে তাপপ্রবাহ বয়ে গেল, তা অস্বাভাবিক ছিল। প্রায় এক মাস তাপপ্রবাহ ছিল। দেশের ৮০ শতাংশ এলাকাজুড়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। সাধারণত এপ্রিলে দেশের বিভিন্ন স্থানে কমবেশি বৃষ্টি হয়। কিন্তু এবার এপ্রিলে শুধু সিলেটে সামান্য বৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘ তাপপ্রবাহের পর ২ মে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি শুরু হয়। এই বৃষ্টি সঠিক সময়ে আসেনি। এই বৃষ্টি অনেকটা অস্বাভাবিক।

রাজধানী ঢাকার কথাই যদি বলি, শুরুর দিকে দেখা গেছে, কোথাও বৃষ্টি হচ্ছে, কোথাও হচ্ছে না। কোথাও বেশি বৃষ্টি হচ্ছে, কোথাও কম। এমনটা কেন হচ্ছে?

বজলুর রশিদ: একটা দীর্ঘ সময় ধরে পরিবেশ উত্তপ্ত থাকার পর বিচ্ছিন্ন বৃষ্টি হয়। এ ক্ষেত্রে দেখা যায়, অনেক জায়গায় বৃষ্টি হচ্ছে, অনেক জায়গায় হচ্ছে না। অর্থাৎ, বৃষ্টির ক্ষেত্রে একটা বৈষম্য লক্ষ করা যাচ্ছে। তা ছাড়া প্রাক্‌–বর্ষা মৌসুমে এ ধরনের বিচ্ছিন্ন বৃষ্টি হয়ে থাকে।

এখন যে বৃষ্টি হচ্ছে, তার সঙ্গে প্রচুর শিলা পড়েছে। আকাশে মেঘের গর্জনও হচ্ছে বেশ। প্রচুর বজ্রপাতের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। এমনটা কেন হচ্ছে? এবারের বৃষ্টির ধরনটা কি একটু ভিন্ন?

বজলুর রশিদ: দেখুন, দেশে অনেক দিন ধরে টানা তাপপ্রবাহ ছিল। দীর্ঘদিন উত্তপ্ত থাকার পর বৃষ্টি হলে এমনটা হয়। এই সময় কালো মেঘ সৃষ্টি হয়। ভূমি থেকে এই মেঘের উচ্চতা থাকে বেশি। এ ধরনের মেঘ থেকে শিলাবৃষ্টি হয়। মেঘ যত ওপরে থাকবে, শিলার আকার তত বাড়বে। আবার মেঘের উচ্চতা বাড়লে গর্জনও বেশি হয়। বিদ্যুৎ বেশি চমকায়। বজ্রপাতও বেশি হয়। শুরুর দিকে কয়েক দিন এই প্রবণতা থাকবে। পরে কমে আসবে।

এবারের বৃষ্টিতে যেভাবে শিল পড়ছে বা বজ্রপাত হচ্ছে, এর আগে তাপপ্রবাহের পরে বৃষ্টির সময় কি এ ধরনের প্রবণতা দেখা গেছে?

বজলুর রশিদ: প্রথমত, আগে কিন্তু এত দিন ধরে দেশে তাপপ্রবাহ দেখা যায়নি। লম্বা তাপপ্রবাহের পর এখন যে বৃষ্টি, তার ধরনটা অস্বাভাবিক। ফলে বেশি শিলাবৃষ্টি, বেশি গর্জন, বেশি বিদ্যুৎ চমকানির মতো প্রবণতাগুলো দেখা যাচ্ছে। স্বাভাবিক ক্ষেত্রে এগুলো হয় না।

বৃষ্টির এ প্রবণতা কী ইঙ্গিত দিচ্ছে? এটা কি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব? সামনে পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে বলে মনে করেন?

বজলুর রশিদ: বৃষ্টির এই যে অস্বাভাবিক প্রবণতা, তা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবেরই প্রতিফলন। দেখুন, দীর্ঘদিন বৃষ্টি হয়নি। সময়মতো বৃষ্টি হয়নি। আবার বৃষ্টির ধরনে ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে, যখন বৃষ্টি হচ্ছে, তখন বেশি বেশি হচ্ছে। এই প্রবণতাগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের পরিবেশে বড় ধরনের পরিবর্তন আসার ইঙ্গিত দিচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের আরও নানামুখী প্রভাব ভবিষ্যতে হয়তো দেখা যাবে।

বৃষ্টি পরিবেশের জন্য উপকারী বলে আমরা জানি। বজ্রপাত ও শিলা বেশি হচ্ছে—এমন বৃষ্টিতে পরিবেশ-প্রকৃতি ও মানুষের কী কী ঝুঁকি আছে?

বজলুর রশিদ: কালো মেঘ ও বেশি উচ্চতায় থাকা মেঘে থেকে এখন যে বৃষ্টি হচ্ছে, তার কিছু ঝুঁকি আছে। যেমন প্রচুর শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। আবার বজ্রপাতও বেশি হচ্ছে। এতে মানুষসহ প্রাণিকুলের জীবনের ঝুঁকি বাড়ছে। ইতিমধ্যে বজ্রপাতে কয়েকজন মারাও গেছেন।

যেহেতু এবার অনেক গরমের পর বৃষ্টি, তাই বৃষ্টি পড়লে অনেক মানুষ উচ্ছ্বাস নিয়ে ভিজতে বাইরে নেমে পড়ছে। সে সময় হয়তো বজ্রপাত হচ্ছে। শিল পড়ছে। এ ক্ষেত্রে কি সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন দেখছেন?

বজলুর রশিদ: এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন। এখন অবশ্যই সবার সতর্ক থাকা উচিত। আকাশে কালো মেঘ থাকলে এই মেঘ থেকে বৃষ্টি নামলে ভিজতে বাইরে বের হওয়া মোটেই উচিত নয়। কারণ, এখন বজ্রপাতের ঝুঁকি আছে। তাই বৃষ্টির সময় বাইরে থাকলে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে হবে। ভবনের ছাদে যাওয়া যাবে না। ঘরে, ভবনে বজ্রনিরোধক দণ্ড স্থাপন করা উচিত।

এবার বর্ষায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে। এই বৃষ্টি কবে নাগাদ শুরু হতে পারে?

বজলুর রশিদ: সম্প্রতি ভারতে অনুষ্ঠিত একটি সম্মেলনে যোগ দেওয়া বিভিন্ন দেশের আবহাওয়াবিদ ও বিশেষজ্ঞরা এই মত দিয়েছেন যে এবার বর্ষা মৌসুমে (জুন-সেপ্টেম্বর) বেশি বৃষ্টি হবে। সম্মেলনে আমিও ছিলাম। আমি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছি। আমাদের ধারণা, আগামী ১৫ জুন থেকে এবারের বর্ষা মৌসুমের বৃষ্টি দেশে শুরু হতে পারে। বর্ষায় বৃষ্টি বেশি হওয়ার অর্থ বাংলাদেশে বন্যার আশঙ্কা রয়ে যায়। আমরা এই পূর্বাভাস নিয়ে সামনের দিনগুলোয় আরও কাজ করব। পরে এ বিষয়ে আমরা আরও সুনির্দিষ্ট করে তথ্য দিতে পারব বলে আশা করি।